বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা বেশি
ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি শব্দ যার সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি জনপ্রিয় মাধ্যম যা সাহায্যে আমরা ঘরে বসে টাকা আয় করতে পারি। এছাড়াও বর্তমানে অনেক মানুষ এই পেশাকে নিজের ক্যারিয়ার গঠনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাই ফ্রিল্যান্সিং করে আপনি যদি টাকা আয় করতে চান তাহলে আপনাকে কিছুই স্ক্রিল অর্জন করতে হবে।
আপনাকে এই স্কিল অর্জন করার সময় অনেক সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আপনি যদি এমন কিছু
নিয়ে কাজ করেন যা চাহিদা মার্কেটে খুব কম হয় তাহলে আপনি সেখান থেকে ভালো আয়
করতে পারবেন না। তাই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাকে জানাবো বর্তমানে
ফ্রিল্যান্সিং এর কোন কাজে চাহিদা সব থেকে বেশি।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা বেশি
- গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphic design)
- ভিডিও এডিটিং (Video editing)
- ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট (Website development)
- ওয়েবসাইট ডিজাইন (Website design)
- কনটেন্ট রাইটিং (Content writing)
- কপিরাইটিং (Copy writing)
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search engine optimization)
- ডাটা এন্ট্রি (Data entry)
- ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital marketing)
- ইউ আই/ইউ এক্স ডিজাইনার (UI/UX Designer)
- ডাটা এনালাইসিস (Data analysis)
- ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট (Virtual assistant)
- ট্রান্সলেটিং (translating)
- ট্রান্সস্ক্রাইবিং (Transcribing)
- গেম ডেভেলপমেন্ট (Game development)
- 2D কার্টুন অ্যানিমেশন (2D Catun animation)
- মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট (Mobail app development)
- লেখকের শেষ মন্তব্য
গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphic design)
গ্রাফিক্স ডিজাইন বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় একটি সেক্টর। আপনি যদি
গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে বিভিন্ন বড় বড়
কোম্পানিতে খুব ভালো বেতনে একজন স্বাধীন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
আপনি বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন-ফাইবার, আপ ওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সার ডটকম
ইত্যাদিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের অনেক কাজ পাওয়া যায়। এই সব মার্কেটপ্লেসে কাজ করে
আপনি প্রচুর টাকা আয় করার মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবেন।
বর্তমানে ছোট হোক কিংবা বড় প্রতিটি কোম্পানি বা বিজনেসের জন্য লোগো ডিজাইন
ও ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যানার ডিজাইন সহ অন্যান্য যেকোনো কারণে বিভিন্ন
ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইন করার প্রয়োজন পড়ে। তাই দক্ষ এবং অভিজ্ঞ গ্রাফিক্স
ডিজাইনারদের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনে কাজের আলাদা
আলাদা অনেকগুলো ক্যাটাগরি বা সেক্টর রয়েছে। তাই প্রতিটা কাজের মার্কেট ডিমান্ড
এর উপর ভিত্তি করে আয়ের পরিমাণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু কাজ নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-লোগো
ডিজাইন, ফ্রন্ট ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাই্ন, অ্যাপ
ডিজাই্ন, আইকন ডিজাই্ন, প্যাটার্ন ডিজাইন, কার্টুন ডিজাইন, ওয়েব
ব্যানার ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন , মেনু ডিজাইন , টি শার্ট ডিজাইন , ফটোশপ
ডিজাইন , জুয়েলারি ডিজাইন এবং প্যাকেজিং লেবেল ডিজাইন ইত্যাদি।
ভিডিও এডিটিং (Video editing)
ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি এটাই জানতে অনেকেই google এ সার্চ দিয়ে
থাকে। তাই আমি বলতে পারি ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভিডিও এডিটিং একটি জনপ্রিয় কাজের
মাধ্যম। বর্তমানে ওপেন প্লাটফর্ম এর জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সবার কাছে খুবই
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে আপনি মাসে লাখ
টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন।
ভিডিও এডিটিং এর অন্তর্ভুক্ত ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু কাজ সমূহ নিম্ন আলোচনা করা
হলোঃ-ভিডিও এড এবং কমার্শিয়ালস, মিউজিক ভিডিওস , কর্পোরেট ভিডিওস ,
ক্যারেক্টার অ্যানিমেশন , মেডিটেশন ভিডিওস, সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওস ,
ভিজুয়াল ইফেক্ট , লোগো অ্যানিমেশন এবং অ্যানিমেশন ফর স্টিমারস
ইত্যাদি। তাহলে আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন কোন কাজগুলো ভিডিও এডিটিং এর মধ্যে
পড়ে।
ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট (Website development)
বর্তমান বিশ্বে প্রতিনিয়ত অনলাইন টেকনোলজি এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন
বেড়ে যাওয়ার ফলে ওয়েবসাইট তৈরি করে টাকা আয় করার সুযোগ অনেক বৃদ্ধি
পাচ্ছে। অনেক বেকার যুবক বর্তমানে ওয়েবসাইট তৈরি করে ঘরে বসে প্রচুর টাকা
আয় করছেন। এটি হতে পারে সাধারণ ব্লগ ওয়েবসাইট কিংবা অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট
এছাড়াও আপনি চাইলে সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট বা নিজের ব্যবসার অথবা
কোম্পানির ওয়েবসাইট বা আরো বিভিন্ন রকমের ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এই কাজের চাহিদা
প্রচুর রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ এমন অনেক অসাধারণ ওয়েব ডেভলপার আছেন যারা মাসে
দুই থেকে তিন লাখ টাকার বেশি আয় করে থাকেন। কারণ বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান
রয়েছে যারা চাই তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকুক যাতে করে মানুষ তাদের ওয়েবসাইট
দেখে তাদের সকল কাজকর্ম সম্পর্কে ঘরে বসে সব কিছু জানতে পারে। আপনারা হয়তো
অনেকেই জানেন না আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠান গুলোতে একজন নতুন ওয়েব ডেভলপারের
মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি হয়ে থাকে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন (Website design)
ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি এ বিষয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে বা অনেক
সময় ফিন্যান্সিং কাজ করতে গিয়ে অনেকে দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় কোন বিষয় নিয়ে
কাজ করব। ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর রয়েছে এর মধ্যে
ওয়েবসাইট ডিজাইন একটি অন্যতম সেক্টর।
বর্তমান আধুনিক যুগে অনলাইনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি করে ওয়েবসাইট থাকে। তাই
বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে ওয়েবসাইট ডিজাইনার চাহিদা চলেছে। যদিও বর্তমান সময়ে
ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এর জন্য আলাদা করে লোক রাখার প্রবণতা কম রয়েছে কারণ ওয়েব
ডেভেলপমেন্ট ওয়েব ডিজাইনের কাজটাও করছে। তবে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো
স্পেশালিস্ট ডিজাইনারদের তাদের কোম্পানির জন্য হায়ার করে থাকেন।
এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট (Application development)
বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে বেকার যুবকদের আয়ের একটু অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে
ফ্রিল্যান্সিং। আর এই ফ্রিল্যান্সিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হচ্ছে
এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট। বর্তমানে আমরা মোবাইল অথবা কম্পিউটারে প্রতিনিয়ত কিছু
অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করি। এই সকল অ্যাপস তৈরি করা থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের
যাবতীয় কাজের দায়িত্ব থাকেন এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ।
বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপস এর প্রাধান্য পাওয়ার
অ্যাপ্লিকেশন ডেভলপারের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন
ডেভেলপমেন্ট করতে হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন
ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট , মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট
, প্রো-রাইটিং এন্ড , রাইটার এবং ওয়ার্ড টিউন ইত্যাদি।
কনটেন্ট রাইটিং (Content writing)
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা সবথেকে বেশি এ বিষয়ে জানতে অনেক ভাই
ও বোনেরা গুগলে সার্চ করে থাকেন। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এ বিভিন্ন ধরনের কাজের
চাহিদা রয়েছে এর মধ্যে একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে কন্টেন্ট রাইটিং। কনটেন্ট রাইটিং
বলতে সাধারণত কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া কে বোঝানো হয়ে
থাকে।
আপনি যদি কোন বিষয়ে কনটেন্ট লিখতে চান তাহলে আপনাকে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রেখে
কন্টেন্ট লিখতে হবে। যেমন পাঠকরা কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এছাড়াও
অনলাইনে কন্ঠের লেখার ক্ষেত্রে কিওয়ার্ড এসইও একটি খুবই
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কন্টেন্ট রাইটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার সমূহ নিম্ন আলোচনা
করা হলোঃ-গুগল ডক্স , গ্রামারলি , প্রো রাইটিং অ্যাড , ওয়ার্ড টিউন ,
রাইটার এবং কপিমেটিক।
কপিরাইটিং (Copy writing)
ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা বেশি বর্তমান সময়ে এ বিষয়ে জানতে মানুষ একটু
বেশি আগ্রহী। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কপিরাইটিং মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং
এর অন্যতম মাধ্যম। যখন একজন ব্যক্তি একটি আসল কাজ তৈরি করেন এবং একটি বাস্তব
মাধ্যম স্থির করেন তখন এটি সক্রিয়ভাবে কাজের কপিরাইট হয়।
একজন কপিরাইট যে সকল কাজগুলো করে থাকেন সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-বিজ্ঞাপন
লেখা, স্লোগান ও ট্যাগ লাইন লেখা, ইমেইল ক্যাম্পেইনের জন্য ইমেইল লেখা,
বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ লেখা, এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা ইত্যাদি।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search engine optimization)
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা বেশি এ বিষয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধা
দ্বন্দ্ব রয়েছে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করার জন্য একটি অন্যতম এবং
জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা সংক্ষেপে এসইও হলো একটি অন্যতম পদ্ধতি যার মাধ্যমে
একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েব পৃষ্ঠাকে অনুসন্ধান বা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের
অনুসন্ধান ফলাফলের তালিকা প্রথম দিকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে। সার্চ ইঞ্জিন
অপটিমাইজেশন মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
অন পেজ অপটিমাইজেশন এবং
অফ পেজ অপটিমাইজেশন
ডাটা এন্ট্রি (Data entry)
ফ্রিল্যান্সিং কাজের আরেকটি জনপ্রিয় এবং অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি। ডাটা
এন্ট্রি হল এমন একটি কাজ সাধারণত যেখানে মানুষ ইলেকট্রনিক ডাটার যোগ যাচাই ও
সম্পাদনা করে থাকে। এছাড়াও ডাটাবেজের ডাটা যোগ করা, বিভিন্ন পরিসংখ্যান যোগ করা
থেকে শুরু করে নোট বার রেকর্ডিং ডাটা প্রতিফলন এবং ডাটা
এন্ট্রির অন্তর্ভুক্ত।
যারা ডাটা এন্ট্রির কাজ করে থাকেন তাদেরকে সাধারণত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বলা হয়ে
থাকে। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হতে হলে আপনাকে কয়েকটি দক্ষতা অর্জন করতে হবে সেগুলো
নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-
- ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে
- আপনার ভালো টাইপিং স্পিড থাকতে হবে
- আপনার ডাটাবেজ এবং সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে
- আপনার তথ্য সংগ্রহের দক্ষতা থাকতে হবে
- আপনাকে বানান সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে হবে
- মাইক্রোসফট অফিস এম এস ওয়ার্ড, এম এস পাওয়ার পয়েন্ট , এম এস এক্সেল ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital marketing)
ডিজিটাল মার্কেটিং হল ডিজিটাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল টেকনোলজি যা ব্যবহার করে
অনলাইনে কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়ে
থাকে। সাধারণভাবে বলতে গেলে বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং হল অনলাইনে আপনার
প্রোডাক্ট গুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার করা। ১৯৯০ সালে যখন প্রথম সার্চ ইঞ্জিন এর
যাত্রা শুরু তখন থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আপনি চাইলে
ডিজিটাল মার্কেটিং বিভিন্ন প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে করতে পারবেন যেমন সেটা হতে পারে
ফেসবুক, ইউটিউব , ইনস্টাগ্রাম , টিক টক এই সবকিছুই ডিজিটাল মার্কেটিং এর এক একটি
প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশের বেকার যুবকদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম। এখন
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে যে নিজের পণ্য নিজেকেই সার্ভিস বা মার্কেটিং করতে হবে
এমন কোন কথা নেই। আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ
করতে পারেন কারণ এগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যেমন এসইও
বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম অংশ। আপনি যদি
অনলাইন market place upwork এর একজন এসইও এক্সপার্ট বা প্রোফাইল দেখেন তাহলে
বুঝতে পারবেন তারা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৮০ থেকে ১০০ ডলারের ওপর ইনকাম
করতে পারে। সুতরাং আপনি বুঝতে পারছেন বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ
করার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং।
ইউ আই/ইউ এক্স ডিজাইনার (UI/UX Designer)
বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ এই যুগে মানুষ সব জিনিস অনলাইনে পেতে
চাই। আর এই জন্যই এখন প্রায় সব বিজনেস অনলাইনে তাদের কার্যক্রম গুলো চালু
করছে। আপনি অনলাইনে বর্তমানে দেখতে পারবেন বই কেনা থেকে শুরু করে আপনার
দৈনন্দিন ব্যবহার্য সকল কিছুই এখন ঘরে বসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিজনেস
গুলো এখন মোবাইল বা ওয়েবসাইটে তাদের পর্ন গুলো মার্কেটিং করতে শুরু করেছে।
আর অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের ডিজাইন করার জন্য ইউ আই বা ইউ এক্স
ডিজাইনার এর প্রয়োজন হয়।
লোকাল মার্কেটপ্লেস বলুন আর গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস বলুন প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ইউআই
এবং ইউ এক্স ডিজাইনারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ইউআই এবং ইউ এক্স ডিজাইন বর্তমান
সময়ে একটি অন্যতম এবং জনপ্রিয় ডিজাইন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে রয়েছে
এর ব্যাপক গুরুত্ব এবং চাহিদা। আপনি চাইলে ইউআই এবং ইউ এক্স ডিজাইন কে
কেন্দ্র করে খুব সহজেই নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন। বর্তমান সময়ে ইউআই
এবং ইউ এক্স এর চাহিদাযুক্ত প্রোফাইল চাকরির বা বিজনেসের ক্ষেত্রে অনেক
বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে সিএম মনির মতে এর চাহিদা বার্ষিক ১৮% বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
ডাটা এনালাইসিস (Data analysis)
ডাটা এনালাইসিস বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয়
কাজের মাধ্যম। সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে কোন ডাটা কে পরিবর্তন পরিবর্ধন ও
পরিষ্কার রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে সাধারণত ডাটা এনালাইসিস বলে।
আপনি যদি আপনার কম্পিউটারকে পেছনে ফেলতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে পুরো মার্কেট
রিসার্চ করে প্রয়োজনীয় ডাটা সংগ্রহ করতে হবে। সেই ডাটা থেকে আপনার কম্পিউটার
কিভাবে ভালো সেল খুঁজে তা আপনাকে নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে। পরবর্তীতে সে
ডাটার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা নতুন পদ্ধতি আপনি আপনার বিজনেসে প্রয়োগ
করতে পারবেন। এইসব কাজ করে দেবে অটোমেশন অথবা ডাটা এনালিস্ট। তাই বর্তমান সময়ে
ডাটা এনালিস্ট এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট (Virtual assistant)
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হচ্ছে এমন একটি অনলাইন মাধ্যম যেখানে আপনি ঘরে
বসে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিকে সাহায্য করতে
পারবেন। এই সাহায্য বা সহযোগিতা করাকে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বলে। আপনি
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে একজন উদ্যোক্তার বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা
প্রদানের মাধ্যমে তাকে উপকৃত করতে পারেন এবং আপনিও একজন সফল ফ্রিল্যান্সার
হতে পারবেন।
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে সাধারণত যেগুলো কাজ করতে হবে সেগুলো নিম্নে
আলোচনা করা হলোঃ-
- এক্সেল এর কাজ করতে হবে
- ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে হবে
- আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ সব ফাইল ম্যানেজ করতে হবে
- মার্কেটিংয়ের কাজ
- সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার বানানো এবং তা পোস্ট করতে হবে
- মেইল কপিরাইট এবং এসইও ইত্যাদি।
ট্রান্সলেটিং (translating)
ট্রান্সলেটিং এর বাংলা অর্থ হলো অনুবাদ করা। কোন একটি ভাষাকে অন্য ভাষায়
রূপান্তর করাকে সাধারণত ট্রান্সলেটিং বলে। বর্তমানে বেশ কিছু ভাষা translation
এর অনেক চাহিদা রয়েছে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-
- চাইনিজ
- এরাবিক
- জাপানিজ
- রাশিয়ান
- জার্মান ইত্যাদি।
ট্রান্সস্ক্রাইবিং (Transcribing)
বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে
ট্রান্সক্রাইবিং। ট্রান্সক্রাইবিং হল মূলত লেখায় অডিও বা ভিডিও থেকে
কথাগুলো লেখার করার একটি মাধ্যম। অডিও এবং ভিডিও থেকে কথাগুলো শুনে যে লেখায়
পরিণত করা হয় তাকে ট্রান্সড্রাইভিং বলা হয়ে থাকে।
ট্রান্সক্রাইবিং করতে মূলত কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হয় সেগুলো নিম্ন আলোচনা করা
হলোঃ-
- নির্ভুল বানান জানতে হবে
- গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করা
- ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে
- দ্রুত টাইপিং স্কিল থাকতে হবে
- ব্যাকরণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন ইত্যাদি।
গেম ডেভেলপমেন্ট (Game development)
বর্তমান যুগ নেট দুনিয়ার যুগ তাই বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার এবং মোবাইল
ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে
চলেছে ভিডিও গেমের চাহিদা। কম্পিউটার বা মোবাইলে গেম খেলে না এমন
মানুষ মেলাজুরি ভার। ছোট থেকে বড় প্রত্যেক বয়সের মানুষই গেম খেলে থাকেন
কেউ হয়তো একটু বেশি গেম খেলে আবার কেউ একটু কম। গেমের প্রতি দুর্বলতা সবারই
কমবেশি চাহিদা রয়েছে। আর এই বিপুল চাহিদার কারণে গেম ডেভেলপমেন্টের
চাহিদাও বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গেমিং বাজারের প্রবৃদ্ধি চলতি
বাজারের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ২১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৩ সালে গেমারদের সংখ্যা ৬. ৩ শতাংশ বেড়ে ৩৩৮ কোটি
ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করেন। বাংলাদেশেও বর্তমানে মোবাইল গেম এর
বাজার বড় আকার ধারণ করেছে। পরিসংখ্যানে তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৮০ বিলিয়ন
ডলারের মোবাইল গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ২.২৫ বিলিয়ন এক্টিভ প্লেয়ার আছে
যারা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের গেম খেলছে। তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে
গেমের চাহিদা কি পরিমান বেড়ে চলেছে। তাই আপনি গেম ডেভেলপমেন্ট কে
নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে গঠন করতে পারেন।
2D কার্টুন অ্যানিমেশন (2D Catun animation)
অ্যানিমেশন এর কথা শুনলে আমাদের প্রায় সবার চোখে প্রথমে আসে মটু পাতলু এবং
মিনা কাটুন এর কথা। কারণ আমরা সবাই ছোটবেলায় টিভিতে মটু পাতলু মিনা কাটুন
এগুলো দেখে বড় হয়েছি। কারো কারো আবার মজার কোন টিভি বিজ্ঞাপনের কথাও খুব সহজে
মনে পড়ে যায়। মজার এসব ভিডিওর কোন চরিত্রই কিন্তু বাস্তবে খুঁজে পাওয়া
যাবে না। কম্পিউটারে অ্যানিমেশন এর মাধ্যমে এগুলো বানানো হয়ে থাকে। মজার মজার
এই ভিডিও দেখার সময় অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে কিভাবে এগুলো বানানো হয়। আসলে
এনিমেশনের কাজ করতে চাইলে খুব বেশি আপনাকে ক্রিয়েটিভ হতে হবে এমন কিন্তু না।
এনিমেশন শুরু করার আগে একটা এডোবি অ্যানিমেট এবং আফটার ইফেক্ট ইত্যাদি
সফটওয়্যার সম্পর্কে আপনাকে খুব ভালোভাবে জানতে হবে। এছাড়াও আপনার ভালো
যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হবে।
বর্তমান ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে এনিমেশনের চাহিদা অনেক বেশি।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস অফ ওয়ার্কে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টি অ্যানিমেশন
কাজের পোস্ট করা হয়। এগুলোতে আবেদন করলে অতি দ্রুত উত্তর পাওয়া যায়।
যদি আপনার প্রফেশনাল ভাবে এনিমেশনের কাজ জানা থাকে তাহলে আপনার কাজ পাওয়ার
সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৮০ভাগ। এসব কাজের মূল্য সর্বনিম্ন ৫০ ডলার থেকে শুরু করে
সর্বোচ্চ দুই হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বর্তমান সময় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের স্বর্ণযুগ। আপনার যদি
প্রোগ্রামিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি শিখতে পারেন এন্ড্রয়েড অ্যাপ
ডেভেলপমেন্ট। এফ ডেভেলপমেন্ট শিখলে নিজের বানানো অ্যাপস থেকে google Admob এর
মাধ্যমে খুব সহজে ইনকাম করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি অ্যাপস সেল করেও ইনকাম করতে
পারবেন। বর্তমানে এন্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন
বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশসহ ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে এফ ডেভেলপার এর চাহিদা
ব্যাপক পরিমাণে রয়েছে। তাই আপনি যদি একজন প্রফেশনাল ডেভলপার হতে পারেন
তাহলে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে আপনার জব এর অনেক সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে সকল মানুষের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। সবাই কম বেশি স্মার্ট ফোন
ব্যবহার করে মোবাইলের সব কাজ করতে পারে। তাই ছোট বড় সকল কোম্পানি তাদের
সার্ভিসকে কাস্টমারের কাছে খুব সহজে পৌঁছে দিতে অ্যাপ তৈরি করছেন। আপনি যদি
ব্যাংক এর কথা চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন এখন প্রায় সকল ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ
রয়েছে আর এই অ্যাপ থেকে সকল ধরনের কাজ করা যাই। তাই আপনি যদি একজন
প্রফেশনাল অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভলপার হতে পারেন তাহলে আপনাকে আর পিছু ফিরে
তাকাতে হবে না। তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে মোবাইল অ্যাপস
ডেভেলপমেন্ট ফ্রিল্যান্সিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আজকের পোস্টে ১৮টি ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজসমূহ এবং ফ্রিল্যান্সিং এর কোন কাজের
চাহিদা বেশি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমান যুগে
প্রায় সবাই অনলাইনের দিকে চালিত হচ্ছে তাই অনলাইন সেবা দলের
চাহিদা দিন দিন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কোন
দক্ষতা না থাকে তাহলে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করার মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি করে
আপনি আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা
সবচেয়ে বেশি তার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আরো নতুন নতুন
তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আর এই পোষ্টের মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি
হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন সংশোধন করার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url